মার্কেটে শপিং করা অবস্থায় মায়ের কোলে সন্তানের মৃত্যু।
বর্তমানে ঈদকে ঘিরে মুসলমানদের আনন্দ উৎসব। আর এই আনন্দ উৎসবের প্রেক্ষিতে সকল শ্রেণীর মানুষ কেনাকাটায় ব্যস্ত। এই ব্যস্ততম কেনাকাটার মাঝে একজন মা তার সন্তানকে নিয়ে কেনাকাটা করতে মার্কেটে যান এবং শপিং করা অবস্থায় সন্তান মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মা তা বুঝতে অক্ষম হন। কি কারনে মায়ের কোলে সন্তানের মৃত্যু হয়েছে প্রাথমিক অবস্থায় বোঝা না গেলেও প্রচন্ড তাপদাহে কারণে মৃত্যু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এতক্ষণ ধরে যে নিউজটি আপনারা পড়লেন এই নিউজটি কোন বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া নয়। বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এই খবরটি ভেসে বেড়াচ্ছে, যেখানে বলা হচ্ছে কুমিল্লা উপজেলার চান্দিনা থানাধীন কোনো এক এলাকায় কোন এক মার্কেটে মা শপিং করতে আসলে প্রচন্ড তাপদাহের কারণে মায়ের কোলে সন্তানের মৃত্যু হয়।
আমি বলছি না নিউজটি সত্য, আমি বলছি না নিউজটি মিথ্যা। তবে আমি কোন নির্ভরযোগ্য সূত্র বা কোন বিশ্বস্ত মিডিয়ার মাধ্যমে এ খবরটি পায়নি। বা কোন ভিডিও ক্লিপস সরাসরি পাওয়া যায়নি, থাকলেও হয়তোবা আমার অগোচরেই রয়ে গেছে।
তবে আমি যে কথা বলার জন্য এতক্ষণ আপনাদের এই নিউজটি শুনালাম, তা হচ্ছে ঈদের মার্কেটে শপিং করতে এসে মায়ের কোলে সন্তানের মৃত্যু এই নিউজে যে ছবিটি ব্যবহার করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণরূপে নিন্দনীয়। কেননা এই ছবি মূলত শপিং করতে আসা মা ও শিশুর নয়।
আমি অনেক ফেসবুক টাইমলাইন এবং অনলাইন পোর্টালে, এমন কি- কিছু ভিডিও বার্তাতে এই ছবি ব্যবহার করতে দেখেছি। যা কোনভাবেই কাম্য নয়। এটি সম্পূর্ণরূপে একটি বিভ্রান্তিকর তথ্য। যারা নিউজের ক্ষেত্রে এই ছবিটি ব্যবহার করেছেন তারা কোথাও লেখেন নাই এটি একটি প্রতীকী ছবি অথবা ছবির ক্রেডিট। সুতরাং আমি বা আমরা ধরে নিতেই পারি তারা বুঝাতে চেয়েছেন এই ছবিটি সেই মা ও সন্তানের, যে মা কিনা ঈদ মার্কেটে শপিং করতে এসে মায়ের কোলে সন্তানের মৃত্যু হয়েছে।
সাধারণ কিছু লাইক কমেন্টস অথবা কিছু ভিউ পাওয়ার লোভে যারা অতিমাত্রায় সংযোজন করে নিউজ প্রচার করছেন এবং নিউজের ছবি ব্যবহার করছেন, তারা জানেনই না ছবিটা কিসের।
এই ছবিটি মূলত ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৯ তারিখে এনটিভি এর অনলাইন পোর্টালে ব্যবহার করা রাখাইনের নিউজ এর ছবি।
এনটিভিতে তখন নিউজ করা হয়েছিল মায়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে প্রাণভয়ে মা হামিদা তার অবুঝ সন্তান মাসুদকে নিয়ে নদী সাঁতরে পার হয়ে বাংলাদেশে ঢোকার সময় মায়ের কোলে সন্তানের মৃত্যু হয়, যা- মা বুঝতে পারেননি।
মা মনে করেছিলেন তার সন্তান ঘুমিয়ে আছে। দীর্ঘক্ষণ সময় যখন তার সন্তান নড়াচড়া করছিলেন না, তখন মা বুঝতে পারেন তার সোনার মানিক আর পৃথিবীতে নেই। তখন মা বারবার করে তার সন্তানের মুখে চুমু খাচ্ছিলেন, আর এই ছবিটিই ক্যাপচার করে নিউজের কভার পিক হিসেবে ব্যবহার করেন একজন সাংবাদিক।
আর দীর্ঘ ৫-৬ বছর পর এসে সেই ছবিকে আমরা চালিয়ে দিচ্ছি সেই শপিং করা মা ও সন্তানের বলে।
(আজব বাঙালি আমরা)
No comments