(প্রবাস জীবন_ পর্ব -১) "বাংলার হার্ট প্রবাসী"একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে আজকের প্রবাস জীবন।
এর সঙ্গে তিনি অনুরোধ করেন সকল প্রবাসীদের, সকল প্রবাসীদেরকে সম্মানের সহিত তিনি বলেন সব প্রবাসী সম্মিলিত "বাংলার হার্ট" । প্রবাসীরা না থাকলে আমাদের বাংলার অর্থনৈতিক অনেকটাই জরাজীর্ণ অনুভব করতো। যা একমাত্র প্রবাসীদের রেমিট্যান্স এর কারণে আজ অবধি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবাহ কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই অতিবাহিত হচ্ছে।
তিনি মূল ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন প্রবাসী ভাইয়েরা একটু বেশি আবেগ প্রবণ যা আমাদের প্রবাসী ভাইদের বিপদের কারণ হয়ে আসছে। তিনি আরো বলেন আবেগ সবার ভিতরেই থাকে আবেগ থাকা প্রয়োজন। তবে অতিরিক্ত আবেগ প্রবন না হওয়াটাই ভালো, কেননা অতিরিক্ত আবেগ নিজের এবং নিজের পরিবারের জন্য অনেক বিপদ বয়ে আনতে পারে।
এরপর তিনি মালয়েশিয়া প্রবাসী বাদলের ঘটনা বলতে গিয়ে বলেন একজন প্রবাসী ভাই হঠাৎই তার ফোনে একটা ফোন পায়, এবং ফোনের অপর পাশ থেকে ভেসে আসে একটি মেয়ের কণ্ঠ প্রাথমিক অবস্থায় তাদের ভিতরে কোন কথা না হলেও মেয়েটি যেহেতু প্রতারক চক্রের একজন ছিল তাই বার বার ট্রাই করতে থাকে যেন বাদলকে তার অনুকূলে আনতে পারে।
তারই ধারাবাহিকতায় সে আবারও ফোন করে এবং সে সক্ষম হয়েছিল বাদলের সাথে কথা বলতে।
যদিও কিছু কথা আমাদের প্রবাসী ভাইরা সোনার পড় কষ্ট পাবে তারপরও আমাকে বলতে হবে। ৫০% প্রবাসী ভাইয়েরা তাদের ফ্যামিলি সাথেই নিজের অজান্তেই ধীরে ধীরে অনেক দূরত্ব তৈরি করে ফেলছে বুঝে না বুঝে এবং তাদের টাইম স্পেন্ট করার জন্য পরিবার থেকে কোন মানুষ না পাওয়ার ফলে যখন তারা বাহিরের কাউকে পায় তখন তারা চেষ্টা করে তাদের সঙ্গে টাইমটা স্পেন্ট করার জন্য।
এই সুযোগের সূত্র ধরেই অনেক প্রতারক চক্র অনেক প্রবাসীকে বিপথে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আমার সেই প্রবাসী বাদল ভাইটি মেয়েটির সঙ্গে যথারীতি কথা কন্টিনিউ করতে থাকে। মেয়েটি প্রাথমিক অবস্থায় তার নাম জানতে চাইলে নামটি বলে বাদল তখন মেয়েটি বলে আমার একজন ভাই ছিল ভাইটি মারা গেছে। তার নাম বাদল, ঠিক আপনার মত দেখতে।
(এখানেও মেয়েটি তার ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমেই তার মিশন শুরু করে)
এরপর মেয়েটি বাদলের সঙ্গে কন্টিনিউ কথা বলতে থাকে, প্রথম পর্যায়ে বাদল এবং মেয়েটি ভাই বোনের সম্পর্ক হলেও ধীরে ধীরে অনেকটাই ঘনিষ্ঠতা রূপ পায়। মেয়েটি যখন বুঝতে পারে বাদল তার প্রতি আকৃষ্ট তার প্রতি দুর্বল তখন থেকে সে শুরু করে তার মাস্টার প্ল্যান।
প্রথম ধাপে সে বলে তার ফ্যামিলিতে বড় ধরণের একটি প্রবলেম, কিছু টাকা প্রয়োজন বাদলের কাছ থেকে সাহায্য চাইলে বাদল কিছু টাকা দিয়ে তাকে সহযোগিতা করে এবং সেই মেয়েটির কথা বলা কন্টিনিউ করতে থাকে। মেয়েটি তার বাচনভঙ্গি তার অঙ্গভঙ্গিতে বাদলকে সম্পূর্ণ আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয় একপর্যায়ে তাদের ভিতর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
এই প্রেমের সম্পর্ক জের ধরে মেয়েটি বাদলের কাছ থেকে আবারও বাড়ির সমস্যা বলে কিছু টাকা নেয়। এরপরে বাবার সমস্যা বাবা অসুস্থ টাকার দরকার। একপর্যায়ে বাবা মারা যায় বাবার বিভিন্ন আনুষ্ঠিকতা করতে গিয়ে বাদলের কাছ থেকে বিশাল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয় মেয়েটি। যদিও সমস্ত চিত্রটাই ছিল পরিকল্পনা অনুযায়ী মিথ্যা ক্রীপ্ট, টাকা নেওয়ার মাধ্যম মাত্র।
কিন্তু বাদল তখনও এবিষয় গুলো বুঝতে পারেনি। এরই মাঝেই বাদল যখন অল্প অল্প করে মেয়েটির হাতে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা বিভিন্ন অসুবিধা সমস্যার অজুহাতে দিয়ে দেয় । বাদল তখন মেয়েটির কাছে বাঁধা পড়ে যায়, এবং বাদলের জীবনে চলে আসে চরম সংকট তার নিজের পরিবার বলতে তার স্ত্রী এবং তার ছয় বছরের সন্তান ছিল।
সে টাকা পয়সা দিতে পারেনা, বরং সে তার বাড়িতে ফোন করে জানায় যে, মালয়েশিয়াতে দীর্ঘদিন যাবত তার কাজ নেই। কিছু টাকা দরকার তার স্ত্রী তার দেবরের কাছ থেকে এবং আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে কিছু টাকা সংগ্রহ করে তার স্বামীর কাছে পাঠিয়ে দেয়। এ টাকাটিও বাদল তার সেই কথিত প্রেমিকা কে পাঠায়। কিছুদিন পর মেয়েটি আবারও নতুন মাস্টার প্ল্যান করে এবং পর্যায়ক্রমিক ভাবে বাদল কাছ থেকে টাকা নিতে থাকে। শেষের দিকে এসে মেয়েটি বলে তার এক ভাই সৌদি আরবে থাকে হঠাৎ করেই সে মারা গেছে তার ফ্যামিলি দিশেহারা। তাকে আনতে হবে অনেক টাকা প্রয়োজন তখন সে আবারও বাদলের কাছ থেকে টাকা চায়, বাদল যেহেতু অনেক টাকা দিয়েছে সেহেতু সে ইচ্ছে করলেও পিছন ফিরে আসতে পারছেনা।
দ্বিতীয়তঃ সে মেয়েটির প্রেমে অন্ধ ছিল। বাদলের কাছেও কোন টাকা না থাকায় সে আবারও পরিবারে হানা দেয় এবং স্ত্রীকে বলে যে আমি কঠিন অসুখে শয্যাশায়ী আমার কাছে কোনো রকমের টাকা নেই।
যেকোনো প্রবাসীর পরিবারের সদস্য সে যে কেউ হোক না কেন, যদি জানতে পারে তাদের ছেলে বাবা অথবা স্বামী প্রবাসে অসুস্থ অবস্থায় আছে। তখন অবশ্যই সবাই আপ্রান চেষ্টা করবে সহযোগিতা করা জন্য।
এখানে বাদলের স্ত্রী ও তার ব্যতিক্রম না। বাদল বিদেশে আসার কিছুদিন পর তার অর্জিত কিছু টাকা দিয়ে দেশে ৪ শতাংশ জায়গা কিনে- ২ শতাংশ বাদলের নামে এবং ২ শতাংশ তার স্ত্রীর নামে করে। তার স্ত্রী তার নিজের নামের সেই ২ শতাংশ জায়গা বিক্রি করে। তার স্বামীর কাছে পাঠিয়ে দেয়। বাদল এই টাকাটিও তার কথিত প্রেমিকার হাতে তুলে দেয়। তার ভাইয়ের লাশ দেশে আনার জন্য।
সব শেষ যে টাকাটি বাদলের স্ত্রী বাদলকে দেয় তা ছিল একটি এনজিওর থেকে উত্তোলন করা ৬০০০০ টাকা এই টাকাটি বাদলকে দেওয়ার পর বাদলের স্ত্রীর হাতে আর কিছুই ছিলনা।
বাদল যখন বুঝতে পারলো যে তার বাড়ি থেকে আর টাকা পাওয়া অসম্ভব। তখন সে তার পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে লাগল। এক পর্যায়ে সে তার পরিবারকে তার স্ত্রীকে বলেই ফেলে যে তার একটি সম্পর্ক আছে এবং সে তাকে বিয়ে করবে।
তার স্ত্রী যেন নিজের থেকে চলে যায়। এরপর বাদলের স্ত্রী কোন উপায়ান্তর না পেয়ে তার ছয় বছরের সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যায়। তার বাবারও তেমন অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিল না তাই বাদলের স্ত্রীর পক্ষে খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায় জীবিকা নির্বাহ করা।
এদিকে বাদলের সেই কথিত অবৈধ প্রেম লীল চলতে থাকে। এবং বাদলের বর্তমান সমস্ত উপার্জন সেই কথিত প্রেমিকার হাতে যাচ্ছে।
এই কথাগুলো ছিল বাদলের স্ত্রীর মুখের কথা।
এবং এই কথাগুলো সোশ্যাল মিডিয়াতে আনেন আমাদের সরকারি একজন পুলিশের কর্মকর্তা তিনি নিজেই এই ঘটনার তদারকি করছেন।
তিনি মূলত চাইছেন আর কোন প্রবাসী ভাই যেন এরকম প্রতারণার ফাঁদে না পরে। প্রবাসীদের জন্য একটি মেসেজ দেওয়ার জন্যই এই কথাগুলো তিনি মিডিয়াতে আনেন।
মন্তব্য: এই ঘটনাটি শোনার পর আচমকাই আমার ভিতর একটা বেদনার টান পড়ে যায়। কেননা বাদলের এই ঘটনাতে উল্লেখ আছে বাদলের একটি ছয় বছরের সন্তান রয়েছে ঠিক আমারও ৮/১০ বছরে একটি সন্তান রয়েছে,
বাদলের ঘটনার কথাগুলো আমি আমার ভিতর অনুভব করলাম এবং চিন্তা করলাম বাদল কিভাবে সম্ভব করতে পারল তার স্ত্রী এবং ৬ বছরের সন্তানকে ফেলে রেখে এমন সিদ্ধান্ত নিতে।
যদিও ঘটনাটির প্রত্যক্ষদর্শী আমি না, তাই আমি এখানে বাদলকেউ সরাসরি দোষারোপ করছি না,
কেননা নিজে সরাসরি কাউকে না জানলে, কোন বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক না। আমি ঘটনার প্রেক্ষিতে কথাগুলো বললাম।
আমিও একজন মালয়েশিয়ান প্রবাসী আমার এই প্রবাস জীবনের স্বল্প সময়ের অভিজ্ঞতা থেকে যতটুকু মনে হয়েছে তাতে আমি মনে করি, বাংলাদেশে যেসব ভাই বা যেসব ছেলেরা একটা নির্দিষ্ট গণ্ডির ভিতর বেড়ে ওঠে।বাবা-মার চোখেই স্বপ্ন দেখতে যারা বাধ্য। বাবা-মার অনেক আনুগত্য সন্তান, বাবা-মার কড়া শাসন এবং আইনেই যাদের বেড়ে ওঠা।
সেসব ভাই কোন কারণ বশত যদি প্রবাস জীবন বেঁছে নেয়, আমি সবার কথা বলছি না পারসেন্টেন্স এর বেশি পরিমাণ এর কথা বলছি ,৭০% ছেলে যারা এমন পরিবেশে বেড়ে উঠেছে, তারা প্রবাস জীবনে বেপরোয়া জীবন-যাপন করতে থাকে এবং বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। বিভিন্ন দেশের মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করা এমনকি কন্টাক্ট ম্যারেজ এর মত অবৈধ কাজ গুলো প্রবাস জীবনে এসে করতে থাকে। (আবার অনেকে আছে প্রবাসে এসে ধর্মীয় রীতিনীতিতেই বিয়ে করে সংসার পাতে। তারা আমার এই কথার বাইরে)
আমার চোখে দেখা অনেকেই নেশাগ্রস্ত হয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও রয়েছে।
আবার অন্যদিকে, যারা দেশের গন্ডিতে বাবা মায়ের অবাধ্য সন্তান। বাবা মায়ের অবাধ্য সন্তান বললে একটু দৃষ্টিকটু লাগে আমি বুঝাতে চাচ্ছি একটু দুষ্টু প্রকৃতির যাদের সারাদিন হইহুল্লোড় করে ছুটে বেড়ানো, এখানে ঝগড়া ওখানে ফল চুরি ঐখানে দুষ্টুমি বাবা-মার বাঁধানো নিয়ম নেই, ছন্নছাড়া জীবন স্বাধীনচেতা মনোভাব এক কথায় বাবা-মায়ের থেকে পাওয়া স্বাধীনতার মাঝেই বড় হয়েছে।
তাদের বেশিরভাগ অংশের ছেলেরা এ প্রবাস জীবনে এসে বাবা মায়ের খুব বাধ্য ছেলে হয়ে থাকেন এই প্রবাস জীবনে অনেক পরিশ্রমী হয়ে থাকেন এই প্রবাস জীবনে তাদের নতুন করে স্বপ্ন দেখার সুযোগ তৈরি হয়।
এ জিনিসটি আমি অনেক ভাবার পরে ভেবে দেখলাম আসলে স্বাধীনচেতা মনভাবে বড় হওয়া ছেলেগুলো এখানে এসে আর স্বাধীনতা খুঁজে না। এই কারণেই মূলত তাদের নষ্টামি করা বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো কিছু তারা খুব বেশি মূল্যায়ন করেনা।
তারা পরিবারকে মিস করে বাবা-মাকে অনুভব করে এবং জীবনের সামনের দিকের একটা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে।
যত বন্ধু-বান্ধব এবং কলিগদের সঙ্গে ওঠাবসা করেছি, যে সব বন্ধু-বান্ধবদের ফোনে বাংলাদেশে কোন সম্পর্ক ছিলো।
আমি বেশিভাগ সম্পর্কের ক্ষেত্রে দেখেছি - শেষ পরিণতি গুলো কেমন যেন ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।
সম্পর্কগুলোতে শান্তির ছোঁয়ার চেয়ে বিরহের সুরটাই আমি বেশি শুনেছি। যেসব প্রবাসী ভাইদের প্রবাসে আসার পূর্বেই সম্পর্ক থাকে তাদেরকে বলব ফ্যামিলি গত ভাবে সেটাকে প্রতিষ্ঠা করানোর জন্য।
এর ফলে সম্পর্কের যে টানাপোড়েন এটা ফ্যামিলিগত দায়িত্ব চলে আসে এতে করে আপনার প্রবাস জীবনে অনেকটাই প্রশান্তি আসবে বলে বিশ্বাস করি।
এবং যারা বিবাহিত প্রবাসী তাদের ক্ষেত্রে আমি বলব আপনারা পরিবারকে বেশি বেশি সময় দিন, পরিবার থেকে বেশি বেশি সময় নিন, পরিবারের সব সদস্যের ছবি আপনার ফোনে রাখুন, আপনার সন্তানের ছবি আপনার ফোনের ওয়ালপেপারে রাখুন, বেশি বেশি আপনার সন্তানদের সাথে কথা বলুন, আপনার স্ত্রীর সাথে কথা বলুন, দেখবেন অনেক বিপদগ্রস্ত কাজ থেকে আপনি নিজেকে নিরাপদ রাখতে সক্ষম হতে পারবেন।
#কেননা একজন পুরুষ ভুল করতে পারলেও একজন বাবা ভুল করতে চায় না।
#একজন পুরুষ ভুল করতে চাইলেও একজন স্বামী ভুল করতে হাজার বার চিন্তা করে।
#একজন পুরুষ ভুল করতে গেলেও একজন প্রবাসী সন্তান তার মা বাবা পরিবারের দায়িত্বের কথা ভেবে ভুল করতে পারে না।
আর এই জন্যই বললাম আপনি যেমন একজন পুরুষ তার আগে আপনি একজন স্বামী, একজন বাবা, সর্বোপরি আপনি একজন পরিবারের সন্তান কারো ভাই কারো ভবিষ্যৎ।
আপনি কোন কিছু করার আগে আপনার পরিবারের সাথে শেয়ার করুন নিজেকে নিরবে একা প্রশ্ন করুন নিজের বিবেক বুদ্ধি দিয়ে বিশ্লেষণ করুন।
এবং ভাবতে থাকুন আপনার জীবনটা শুধু আপনার? নাকি এর সঙ্গে জড়িত আছে আরো অনেক প্রাণ। আপনার সন্তান আপনার স্ত্রী আপনার ভাই-বোন আপনার বাবা মা সবাই আপনার দিকে তাকিয়ে থাকে।
আপনার একটিমাত্র ভুল শুধু আপনার জীবনকে নয় আপনার স্বপরিবারে নষ্ট করার কারণ হতে পারে।
_________________________________________
আপনার মন্তব্য আপনি কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
No comments