ইসলামী মৌলবাদ এবং হিন্দুত্ববাদ কি? সবারই জানা দরকার। উগ্রবাদী গোঁরামী পথভ্রষ্ট নষ্ট এরা কারা কোন ধর্মের?
মৌলবাদ শব্দটি ইংরেজি ফান্ডামেন্টালিজম (Fundamentalism) শব্দ থেকে এসেছে। মূলত ফান্ডামেন্টালিজম শব্দ দিয়ে বুঝানো হয়েছে কট্টরপন্থী ধর্মীয় অনুগামীদের। যারা ধর্মীয় উদারপন্থীদের সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। যদিও আমি ধর্মীয় কট্টরপন্থী এবং ধর্মীয় উদারপন্থী এই দুই ধারা আছে বলে বিশ্বাস করিনা। এসব আমাদেরকে ভুল বুঝানো হয়েছে বলে আমি মনে করি।
কেমন করে ভুল বুঝানো হয়েছে তা আমি ব্যাখ্যা করবো একটু পরে।
১৯২২ সালে সর্বপ্রথম আমেরিকায় ব্যবহৃত হয় ফান্ডামেন্টালিজম(Fundamentalism) শব্দটি।
আমি মনে করি পশ্চিমাদের স্বার্থ হাসিল করতেই anti-muslim হিসাবে এই ফান্ডামেন্টালিজম শব্দটি একটি মেরুকরণের ভেতর দিয়ে প্রকাশ করা হয়। আমি এই কারণে বলছি শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মের ধারকদের কে মৌলবাদী বলে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। কিভাবে এই শব্দকে একতরফা বা মেরুকরণ করা হয়েছে আমি শেষের দিকে আলোচনা করব।
যদিও ফান্ডামেন্টালিজম বা মৌলবাদ শব্দটি বিশ্লেষণ করলে এর অর্থ দাঁড়ায় ভিন্ন।
বাংলা মৌলবাদ শব্দের অন্য অর্থ হচ্ছে মূলজাত।
এখানে মূলজাত শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে ধর্মকে উদ্দেশ্য করেই। কেননা পৃথিবীতে একমাত্র মৌলিক বিষয় হচ্ছে ধর্ম।
মূলত যারা ধর্মের ধারক-বাহক তাদেরকে বোঝানোর ক্ষেত্রে বাংলা মৌলবাদ শব্দের উৎপত্তি হয়।
প্রতিটি ধর্মের ভিতরে মৌলবাদ আছে, মৌলবাদ ব্যতীত কোন ধর্ম চলতে পারে না। ইসলাম ধর্মের যে রকম ধারক-বাহক আছে। হিন্দু ধর্মের তদ্রূপ ধারক-বাহক আছে। একি রকম খ্রিস্টান বৌদ্ধ শিখ পৃথিবীতে যত ধর্ম আছে সবগুলো ধর্মের ধারক-বাহক আছে। সাধারণত ভাবে আমরা এই ধর্মের ধারক বাহক কে মৌলবাদ বলে থাকি।
যদি কোন পন্ডিত ব্যক্তি বা পশ্চিমারা দাবি করে আমার এই কথা সত্য নয়; তাহলে আমি বলব ফান্ডামেন্টালিজম শব্দের অর্থ মৌলবাদ পরিবর্তে অন্য কিছু ব্যবহার করা হোক।
পশ্চিমাদের চোখে ফান্ডামেন্টালিজম বা মৌলবাদ মানে হচ্ছে উগ্র ধর্ম গোঁড়ামির কিছু মানব গোষ্ঠী।
যা আমার কাছে নিতান্ত হাস্যকর বলে মনে হয়, ধর্মের উগ্রপন্থী বা উদারপন্থী বলে কিছু আছে বলে আমি মনে করিনা। যারা ধর্মের ধারক-বাহক তারা ধর্মকে আপ্রাণ চেষ্টা করে ১০০% অনুসরণ করতে। এটাকে আমরা কখনো উগ্রবাদী বা ধর্ম ঘোরামি বলতে পারিনা।
তাদের দৃষ্টিতে ধর্মের কট্টরপন্থী ও উদারপন্থী থাকলেও, ইসলাম ধর্মে কট্টরপন্থী ও উদারপন্থী বলে কোন শব্দ নেই। ইসলাম শুধুই ইসলাম, ইসলামের কট্টরপন্থীর নামে কেউ যেমন কোন কিছু সংযোজন করার ক্ষমতা রাখে না, ঠিক তেমনি ইসলামের উদারপন্থীর নামে কোন কিছু উহ্য বা বাদ দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না। এদের কে আল্লাহ্ তায়ালার ভাষায় এরা ইসলামের শত্রু কাফের মুনাফিক।
আপনি আপনার ধর্ম আপনি কিভাবে পালন করবেন সেটা আপনার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। আপনার ধর্মের কথা ধর্মের বাণী আমার বিপক্ষে আসলেই আমি আপনাকে ধর্ম ঘোরামি উগ্রবাদী বলবো এটা কোন আইনে লেখা আছে।
আপনি আপনার ধর্ম প্রসারিত করার চেষ্টা করবেন। আমি আমার ধর্ম প্রসারিত করার চেষ্টা করব। কেননা আমরা একেক জন একেক ধর্মে বিশ্বাসী। আর মানুষ ধর্মের জন্য কাজ করে বিশ্বাস থেকে। যখন এই বিশ্বাসকেই একে-অপরকে আঘাত করব তখনই সৃষ্টি হবে আমাদের ধর্মবিশ্বাসী মনটার ভিতরে আচরণ; তখন মনে হতেই পারে কারো কাছে ধর্মগোরামি ধর্মউগ্রবাদী এটাই স্বাভাবিক।
তা যদি কোন জাতিগোষ্ঠীর বিপক্ষে যায় যাইতেই পারে; কেননা আপনার ধর্ম আমার ধর্ম যদি একই হত, তাহলে আমরা এক অনুসারী হতাম একই আদর্শে বিশ্বাস করতাম। আমরা যেহেতু ধর্মের দিক থেকে ভিন্ন সেহেতু আমাদের মতামত আমাদের আদর্শ আলাদা থাকতেই পারে।
বিভিন্ন ধর্মে বিভিন্ন রকমের অমিল থাকতেই পারে। অমিল আছে বলেই পৃথিবীতে এখন অনেক রকমের ধর্ম পালিত হয়।
তবে আমি বিশ্বাস করি পৃথিবীতে যত হাজার ধর্ম আছে কোন ধর্ম তার অনুসারী কে বিপথগামী হতে বলে না, পথভ্রষ্ট হতে বলে না। যারা ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন একমাত্র তারাই পথ ভ্রষ্ট এবং উগ্রবাদী জঙ্গী।
আর এই পথ ভ্রষ্ট উগ্রবাদী জঙ্গি শুধু ইসলাম ধর্মের ভিতর থেকেই সৃষ্টি হয় এই ভ্রান্ত ধারণাটি
সুকৌশলে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে ইসলামের উপর।
২০১৯ সালে ১৫ ই মার্চ শুক্রবার জুমার নামাজ চলাকালীন সময়ে নিউজিল্যান্ডের আল নূর মসজিদ এবং ক্রাইস্টচার্চ লিনউড ইসলামিক সেন্টারে গেমিং স্টাইলে যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয় সেখানে মারা যায় ৫০ জন এবং গুরুতর আহত হয় ৫০ জন এর ভিতরে আমাদের বাংলাদেশের নাগরিক ছিল অনেক। সে ছিল অস্ট্রেলিয়ান বংশোদ্ভূত খ্রিস্ট ধর্ম অনুসারী, সে কোন ধর্মের আদর্শে ছিল, সেকি উগ্রবাদী নয় সেকি জঙ্গী নয় সে কি পথ ভ্রষ্ট নয়।
একজন মাত্র মানুষ যেখানে শতাধিক মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করতে পারে তার চেয়ে বড় জঙ্গি আর কে হতে পার।
তাহলে কি আমি বলব খ্রিস্টধর্ম জঙ্গী তৈরি করে।
সে কি আসলেই কখনো তার ধর্মের পথে ছিল তার ধর্ম কি গেমিং স্টাইলে মানুষ মারার লাইসেন্স তাকে দিয়েছে। আমরা যদি বিশ্বশান্তির চিন্তা করি প্রথমে আমাদেরকে চিন্তা করতে হবে নিরপেক্ষতা। আসলে আমরা পথ ভ্রষ্ট নষ্ট উগ্রবাদী জঙ্গী এই মানুষগুলোকে এই গোষ্ঠীগুলোকে কখনো যেন ধর্মের লেবাসে কোন এক ধর্ম অনুসারী জাতিকে দোষারোপ না করি।
আমরা মানুষ মানুষী নিজেদের চরিত্রকে বিভিন্ন ধর্মের লেবাস পড়ে যত ধর্মদ্রোহিতা করে থাকি, তাকেই রঙ মাখিয়ে দায় চাপানো হয় মৌলবাদের উপরে।
তাই বলে মৌলবাদ বা ধর্মের ধারক-বাহক ধর্মচর্চা বাদ দেবে এমনটি মনে করা বোকামি।
আমাদের কিছু সংশোধনের প্রয়োজন আছে তবে নিজেদের স্বার্থে জন্য আমরা এই সংশোধনের কাজগুলো বিশ্ব নেতৃবৃন্দ থেকে দেখি না।
হ্যাঁ আমি মনে করি ধর্মউগ্রবাদী, ধর্মঘোরামি কথাটি ধর্মের সাথে ব্যবহৃত না করায় উত্তম, যদি বলা হতো ধর্মের লেবাসধারী পথভ্রষ্ট কিছু মানুষের সমষ্টিগত দলকেই ফান্ডামেন্টালিজম বলা হয়।
তাহলে আমি ফান্ডামেন্টালিজম শব্দের বিরোধিতা করতাম না। আপনি বলতে পারেন ফান্ডামেন্টালিজম মানেই ধর্মের লেবাসধারী পথ ভ্রষ্ট কিছু মানুষের সমষ্টিগত দলকেই বুঝানো হয়েছে। তাহলে বলব ফান্ডামেন্টালিজম শব্দের বাংলা আক্ষরিক অর্থ মৌলবাদ এইটা কে ব্যবহার বন্ধ করা হোক।
এতক্ষণ আমার লেখা যারা পড়ছেন যদি মনে করে থাকেন মৌলবাদ শুধু ইসলাম ধর্মের ধারক বাহক কে বলা হয় তাহলে আপনি এতদিন ভুল বুঝে এসেছেন।
মৌলবাদ হচ্ছে ধর্মের ধারক বাহক এবং ধর্মের সঠিক চর্চাকারী। তা হতে পারে ইসলাম ধর্ম হতে পারে হিন্দু ধর্ম হতে পারে বৌদ্ধ খ্রিস্টান শিখ বিভিন্ন ধর্মের হতে পারে।
তো এখন আসুন আমরা দেখি আমাদেরকে কিভাবে ভুল বোঝানো হয়েছে মৌলবাদ সম্পর্কে। আমেরিকা ফান্ডামেন্টালিজম কিভাবে ব্যাখ্যা করেছে এটা তাদের ব্যাক্তিগত ব্যাপার, কিন্তু এই ফান্ডামেন্টালিজম শব্দটি আমাদের কে কিভাবে চাপিয়ে দিয়েছে এটা হচ্ছে মূল বিষয়।
মৌলবাদ অর্থ আমরা যেটা বুঝি মূলজাত যা মৌল বা মূল থেকে যে কথাটি এসেছে। এই মৌল বা মূল কথাটি মূলত অনেক পুরনো কে বুঝানো হয়েছে যেটা মূল অর্থে ধর্মকেই বোঝানো হয়েছে।
ইংরেজি ফান্ডামেন্টালিজম শব্দের আভিধানিক বাংলা শব্দ যখন মৌলবাদ প্রকাশিত হয়। তখন ইংরেজী ভাষাভাষী লোকজন ঠিকভাবে জানতো যে এটি একটি নির্দিষ্ট জাতি গোষ্ঠী কে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু বাংলা ভাষাভাষী ধর্মপ্রাণ মানুষ গুলো জানতো না এটি নির্দিষ্ট কোন জাতিকে বোঝানো হয়েছে, ফান্ডামেন্টালিজম শব্দের ব্যাখ্যাটা বাংলা জাতিকে বোঝনো হয়েছে
ধর্ম উগ্রবাদী বা ধর্ম গোরামি যা মূলত ধর্মের সাথে একদম সাংঘর্ষিক করে তোলা হয়েছে। তারা এই ধর্ম উগ্রবাদী বা ধর্ম গোরামি না বলে বলতে পারতো উগ্রবাদী গোঁড়ামি পথভ্রষ্ট নষ্ট জাতিকে বুঝাতে ফান্ডামেন্টালিজম শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তাহলে মনে হয় ফান্ডামেন্টালিজম বাংলা আভিধানিক অর্থ মৌলবাদ ব্যবহার হতো না।
ভাষা সংস্কৃতির উপরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেমন মৌলবাদের অর্থ বিকৃত করা হয়েছে। মৌলবাদকে একটি নির্দিষ্ট পরিচয় দেওয়া হয়েছে।
কেননা এই মৌলবাদ শব্দটি যখন ব্যবহার করা হয় তখন আমরা এইভাবে ব্যবহার করতে পারি যেমন ইসলামী মৌলবাদ হিন্দু মৌলবাদ বা অন্যান্য ধর্মের মৌলবাদ।
কিন্তু তা করা হয় না শুধুমাত্র ইসলামী মৌলবাদ শব্দটিকে সুনিপুণভাবে অস্ত্রোপচার করে ইসলামকে উহ্য করে মৌলবাদ শব্দটি সম্পূর্ণরূপে ইসলাম ধর্ম অনুসারীদর চাপিয়ে দেওয়া হয়।
সুকৌশলে মৌলবাদ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয় হিন্দুত্ববাদ, হিন্দুত্ববাদ মূলত হিন্দুত্ববাদ ঠিক তখনই প্রতিষ্ঠিত হয় যখন সুকৌশলে মৌলবাদ একটি জাতিগোষ্ঠীর উপরে চাপিয়ে দেওয়া হয়।
যাহোক যদি মৌলবাদ বা ইসলামী মৌলবাদ কোন ব্যক্তি বা জনগোষ্ঠীর কাছে অপছন্দনীয় হয় তাদের কাছে যদি মৌলবাদ শব্দটি জঙ্গী বলে মনে হয়।
হিন্দুত্ববাদ তাহলে কি? হিন্দুত্ববাদ আর বর্তমান মৌলবাদ এর মধ্যে পার্থক্য কি?
হিন্দুত্ববাদ যদি আপনি দাবি করেন হিন্দুদের ধর্মের ধারক-বাহক আদর্শ কে সঠিকভাবে পালন করায় হিন্দুত্ববাদ।
তাহলে আমি মৌলবাদের বা ইসলামী মৌলবাদের ক্ষেত্রে কি সংজ্ঞা দিব।
এখানে কি কেউ কাউকে জঙ্গী উগ্রবাদী পথভ্রষ্ট বলার ক্ষমতা রাখে।
আমি শুরুতেই বলেছি পথ ভ্রষ্ট নষ্ট উগ্রবাদী জঙ্গী কোনো বিশেষ ধর্ম বা গোষ্ঠীর হতে পারে না।
আমি পরিকল্পনা করেছি আমার অভিমত আমি ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করতে থাকবো। যদি আপনাদের পাশে পাই। দেখা হবে আবারো। (আল্লাহ হাফেজ )
(আপনার মন্তব্য আপনি কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।) আমি আপনার মন্তব্য কে সম্মান করি।
No comments