Header Ads

Header ADS

আমি, আব্দুল্লাহ আল মামুন

আমি আমার মত। হতে চাইনা কারু মত। কি হবে? অন্যের সাথে তুলনা করে। আমার স্বক্ষমতার মাঝেই আমার স্বপ্ন।।

"Self-realization is power for oneself"

বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের পুরোনো খেলা এবং রবীন্দ্রনাথের নোংরা কুকীর্তি। যা এখনও অনেক বাংলার কিছু জারজ মানতে পারে না। তাদের জন্য। (দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য)। /// /// ৭ই অক্টোবর ২০১৯ ইং বুয়েটের ভয়নংকর একটি কালো রাত, জাতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত।

"বিকল এই টাকার মেশিন"

(Late post)


গত ০৭/০৫/২৩ইং রাত ১০:০০ টায়, না ফেরার দেশে চলে গেলেন এক জন প্রবাসী। আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না যে এই মানুষটি আর আমাদের মাঝে নেই। 

   

তিনি ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট থানাধীন লক্ষীকুড়া গ্রামের বাসিন্দা।
নামঃ হারুন-অর-রশিদ
পিতাঃ মৃত, হাসেন আলী 

আসা যাওয়াটা প্রকৃতির নিয়ম মানছি, তবুও বিশ্বাস হতে কষ্ট হচ্ছে কারণ, দীর্ঘ ৫/৬ বছর এক সংগে কাজ করেছি, একই রুমে থেকেছি, একই সঙ্গে খেয়েছি, হাজারো স্মৃতি জড়ানো এই বছর গুলো।

তিনি ছিলেন আমার অভিভাবক।

অনেক সময় রাগ করলেও পরক্ষনেই আবার ডাকতেন কি করছ বা এই কাজটা একটু করে দিবে, যদিও কাজ গুলো ছিল কথা বলার বাহানা মাত্র। 

আমার অভিভাবক এই কারনে বললাম, শুরু থেকেই আমি তাকে চাচা বলে ডাকতাম, সম্পর্কটা চাচা ভাতিজার হলেও বন্ধুত্ব কোন কমতি ছিলনা।

তিনিও আমাকে আগলে রেখেছিলেন ছেলের মত। আমাকে ছেলেই বলতেন কারন তিনার দুই সন্তান মেয়ে ও ছেলের মাঝে ছোট ছেলের নাম হচ্ছে মামুন, আমার নামও মামুন। এই সুবাদে প্রবাসের দীর্ঘ নিঃসঙ্গ জীবনের কিছু সময় পরস্পরকে বুঝার সময় পেয়েছিলাম।

বড় দুঃখ জনক হচ্ছে ২/৩ দিন আগেও যে মানুষ টি আশেপাশে চলছিলেন, যিনি আবারও ফিরে এসে আমাদের সাথেই ঘুমাতেন, তিনি আজ আমাদের সীমানার বাহিরে হাসপাতালে মর্গে শুয়ে আছেন, "বড় একা একা"। 

                           

আমার কাছে বারবার মনে হচ্ছে আজ তিনি বিগ বসের সাথে আমাদের কাছে ফিরছেন। আমি ভাবতেই পারছিনা তিনি আর ফিরবেন না আমাদের মাঝে।

আজকেই সেই দিন, যেদিন তিনি শহরের ২/৩ দিনের কাজ শেষ করে একজন ইন্দোনেশিয়ান সহকর্মী সহ বসের সাথে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে আসার কথা। আজকে আমাদের বস আসছেন ঠিক, কিন্তু ফিরে আসেননি তিনি। তিনি হাসপাতালে সেই মর্গেই রয়ে গেলেন।

তিনি এক সপ্তাহ আগে আমাদের বসের সাথে সাময়িক দুই তিন দিনের কাজের জন্য কোয়ালালামপুর যান। কাজ শেষ করে তার ফিরে আসার কথা পূর্বের কাজের স্থানে। কিন্তু যেহেতু দুইজন ছিলেন, সেখানে একজন অসুস্থ হয়ে পড়েন, তার জন্য তিনিও আরো অপেক্ষা করতে থাকেন, যে একসাথে পূর্বের কাজের জায়গায় ফিরে আসবেন। এরই মাঝে বস ফোন দিয়ে বলে আমি সামনের সপ্তাহ যখন যাব তখন দুইজনকে সঙ্গে নিয়ে যাব। এই কারণে তিনি কুয়ালালামপুর যেখানে তিনি থাকতেন সেখানে অপেক্ষা করেন আজকে দিনের জন্য। 

কিন্তু আঙ্কেল ৭ তারিখ রাতে হঠাৎ করেই তিনি অসুস্থ অনুভব করেন। আঙ্কেলকে স্থানীয় একটা ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা করার পর তিনি সুস্থতা অনুভব করেন।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কথা বললেও তিনি বলেন এখন তিনি একটু সুস্থতা অনুভব করছেন, আগামী কাল সকালে তিনি হাসপাতালে ডাক্তারের সাথে দেখা করে স্থায়ী চিকিৎসা নেবেন। এই বলে তিনি বাসায় ফিরে যান। বাসায় ফেরার পর আনুমানিক রাত দশটার সময় তিনি আরো বেশি অসুস্থ অনুভব করেন। এতটাই অসুস্থ অনুভব করেন যে তিনি আমাকে ফোন করার ক্ষমতা পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেন। পাশে থাকা রুম মেট ইন্দোনেশিয়ান নাগরিক আমাকে ফোন করেন যে, আঙ্কেলের অবস্থা খুব আশঙ্কা জনক।
যেহেতু আমি পূর্বের কাজের জায়গায় অবস্থান করেছিলাম যা অনেক দূরে, ইচ্ছে করলেও সঙ্গে সঙ্গে তার ওখানে যাওয়া সম্ভব ছিল না। কোন সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে আমার পরিচিত এক মালয়েশিয়ান নাগরিককে দিয়ে আমি অ্যাম্বুলেন্স কল করি। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স আসা ঠিক এক থেকে দুই মিনিট পূর্বেই আঙ্কেলের হার্ট ব্লক হয়ে তিনি পরলোক গমন করেন। 

অসুস্থ রোগীকে নিতে আসা এম্বুলেন্স নিয়ে যান মৃত ব্যক্তিকে। 

আমি মনের কথাগুলো লেখার সময়ও তিনি ঘুমিয়ে আছেন মালয়েশিয়ান গভার্মেন্ট হাসপাতালের মর্গে।
সবশেষ মেডিকেল চেক পুলিশ রিপোর্ট মালয়েশিয়ার সমস্ত ফর্মালিটি অনুসরণ করে, আঙ্কেলের মৃতদেহ দেশে পাঠানোর কার্যক্রম প্রায় শেষের দিকে। যতদূর সম্ভব আমি আশা করছি এ সপ্তাহে আঙ্কেলকে দেশে পাঠানো সম্ভব হবে। সবাই আমার হারুন আঙ্কেলের জন্য দোয়া করবেন। দোয়া করবেন তার পরিবারের জন্য।

আমার সাথে তার সম্পর্ক বা বন্ধনটা ছিল অন্যরকম। তিনি যে আমাকে ঋণী করে গেছেন আমি তা কোনদিনও শোধ করতে পারবো না।

কত যে ঋণী করে গেছেন তা বলতে পারবো না তবে সামান্যতম একটি উদাহরণ দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করছি।

আমি অধিকাংশ সময় কাজের চাপে বাজার বা রান্নাবান্নার কাজে আসতে পারতাম না, কোন দিন সময় থাকলেও যদি একটু সহযোগিতার জন্য পাশে যাইতাম, তখন একটি কথায় বলতো, আমি যতদিন আসি তোমাকে রান্না ঘরে আসতে হবে না। বাজার করা তো দুরের কথা। আর কি বলবো।

দীর্ঘ সময় ধরে প্রবাসেই আমাদের কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশী মিলে একটা পরিবার তৈরি হয়েছিলো। যেখানে বন্ধন ছিল অন্য রকম। হয়তো বা এই অচেনা বন্ধনেই  ভুলতে পারবো না কোনদিন তাকে। দোয়া করি আঙ্কেল আল্লাহ আপনাকে ভাল রাখুন।

No comments

Theme images by mattjeacock. Powered by Blogger.