নওগাঁর মহাদেবপুরে দাউল বরবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয় একজন হিন্দু শিক্ষিকা ১৮ থেকে ২০ জন ছাত্রীকে বেত দিয়ে মারধর করে হিজাব পড়ে স্কুলে আসার জন্য। ছাত্রীদের অভিযোগ যদিও তারা স্কুল ড্রেস পরিহিত ছিল শুধু হিজাব পরার কারনে শিক্ষিকার আক্রমণের শিকার হয়।
একজন হিন্দু শিক্ষিকা আমোদিনী পাল ১৮ থেকে ২০ জন ছাত্রীকে বেত দিয়ে মারধর করলেন, ছাত্রীদের অপরাধ ছিল তারা স্কুলড্রেস পড়ার উপরে হিজাব পরিধান করে। ঘটনাটি ঘটে নওগাঁর মহাদেবপুর দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে।
একজন ছাত্রীর ভাষ্যমতে জানা যায় প্রতিদিনের ন্যায় ৬ই এপ্রিল স্বাভাবিক ভাবেই তারা স্কুলের এসেম্বলীতে দাঁড়ায়। জাতীয় সংগীত গাওয়ার পর প্রধান শিক্ষিকা আমোদিনী পাল হিজাব পরিহিতা ছাত্রীদের কাছে আসে। এবং তাদেরকে জিজ্ঞেস করে তোমরা কেন হিজাব পড়ে এসেছ, ঢং করতে আসছ, ঢং করবা বাড়িতে করবা বিদ্যালয় না।
তখন একজন ছাত্রী প্রধান শিক্ষিকাকে বলে তারা হিজাব পড়লেও স্কুল ড্রেস পড়ে এসেছে। এতে করে প্রধান শিক্ষিকা রেগে গিয়ে ইউক্যালিপটাস গাছের চিকন ডাল দিয়ে ১৮ থেকে ২০ জন ছাত্রীকে মারধর করে এবং বলে পর্দা করবা বাড়িতে ঘরে বসে পর্দা করবে। স্কুলে এসব নাটক চলবে না।
ঐ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রী সাদিয়া বলেন, শিক্ষিকা তাদেরকে বলেন, ‘স্কুলে কোনো পর্দা চলবে না। ঢং করে আসছ। বাসায় গিয়ে কি বোরকা পরে থাক? যখন তোমরা মহাদেবপুর বাজারে যাবে তখন পর্দা করবে। স্কুলে এলে মাথার কাপড় ফেলে আসবে।’ তিনি ছাত্রীদের হিজাব খুলে ফেলার জন্য টানাটানি করেন। যারা হিজাব ছাড়া শুধু মাস্ক পরে এসেছিল তাদের মাস্কও খুলে দেন। তিনি হুমকি দেন যে, ‘কাল থেকে যদি হিজাব ও মাস্ক পরে আসো তাহলে পিটিয়ে তোমাদের পিঠের চামড়া তুলে নেওয়া হবে।’
শিক্ষার্থী সাদিয়া আরও জানায়, লাইনের কয়েকজন ছাত্রীকে মারতে মারতে তার কাছে এসে তাকে মারতে থাকলে লাঠি ভেঙে যায়। এছাড়াও দশম শ্রেণির ছাত্রী ঐশি, সুমাইয়া, তিথি, লাকি, নবম শ্রেণির মোনাসহ কমপক্ষে ২০ জন ছাত্রীকে পেটানো হয়।
সাদিয়ার মা সাবেরা বেগম জানান, তার মেয়ে স্কুল থেকে এসে কান্নাকাটি করে বলে যে, হিজাব পরার জন্য ম্যাডাম মেরেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের মেয়েরা বড় হয়েছে। তারা তো পর্দা করবেই। স্কুলে গিয়েই ভদ্রতা শিখবে। তা না শিখিয়ে যদি এরকম মারপিট করে তাহলে আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা কোথায়?’
এ সময় তিনি সন্তানদের নিরাপত্তার স্বার্থে অভিযুক্ত শিক্ষিকার অপসারণ দাবি করেন।
দশম শ্রেণির আরেক ছাত্রী উম্মে সুমাইয়া আকতারের মা মরিয়ম নেছাও জানান, তার মেয়ে সুমাইয়া ও ক্লাসমেট তিথি জাতীয় সঙ্গীতের পর স্কুলে গেলে তারা কেন হিজাব পরে স্কুলে গেছে সেই অপরাধে শিক্ষিকা আমোদিনি পাল তাদেরকে পিটানোর জন্য শিক্ষক বদিউল আলমকে নির্দেশ দেন। নির্দেশ পেয়ে বাদিউল মাস্টার সুমাইয়া ও তিথিকে লাঠি দিয়ে পেটায়। এ ঘটনার পর তার মেয়ে ক্লাস না করে বাড়ি এসে কাঁদতে থাকে।
ভুক্তভোগী ছাত্রীরা কান্না করতে করতে বাড়িতে চলে যায় এবং অভিভাবকদের এ বিষয়গুলো জানায়। এ বিষয়টি নিয়ে জনসাধারণ এবং অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়।
৭ ই এপ্রিল কয়েক শত অভিভাবক স্কুলে এসে অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগ দায়ের করার সময় আমোদিনী পাল শিক্ষিকাকে উপস্থিত না পেয়ে জনসাধারণ এবং অভিভাবক রাগান্বিত হয়ে স্কুলের কিছু আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। ঘটনাস্থলে পুলিশ দ্রুত পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
তবে ফোনে প্রধান শিক্ষিকা আমোদিনী পালের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি।
যেহেতু ছাত্রীরা অভিযোগ করছেন তারা স্কুলের নির্ধারিত ড্রেস পরিহিত ছিল। তাহলে কি? প্রধান শিক্ষিকা আমোদিনী পাল যে রিএকশন টা ছাত্রীদের সঙ্গে দেখিয়েছেন তা কি শুধু হিজাবের কারণেই?
কেন তিনি এমন ঘটনাটি ঘটিয়েছেন তার কোন সঠিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আমরা আশা করছি এর সঠিক তদন্ত হোক। এবং কারো ধর্মীয় বিষয় নিয়ে এভাবে টানা টানি, না করাটাই শ্রেয়।
আমার মন্তব্য:
প্রতিটি ধর্মের নির্দিষ্ট বাধ্যবাধকতা থাকে। সেটা খ্রিস্টান ধর্মে আছে, বৌদ্ধ ধর্মে আছে, হিন্দু ধর্মেও আছে তেমনি মুসলিম ধর্মে আছে।
হিন্দু ধর্মে যেমন একজন বিবাহিত মেয়ের শাঁখা সিঁদুর পরা বাধ্যতামূলক। তেমনি ইসলাম ধর্মে একজন পরিণত মেয়ের জন্য পর্দা বাধ্যতামূলক। একজন হিন্দু মহিলাকে যেমন শাঁখা-সিঁদুর খুলে ফেলতে বলা, তার ধর্মে আঘাত করা।
ঠিক একজন মুসলিম মেয়েকে তার পর্দা নিয়ে কথা বলা মানে তার ধর্মে আঘাত করা।
অনেক নারীবাদী সুশীল সমাজ আছেন তারা বলেন পর্দা মানে নারীদের বন্দিজীবন। নারীদেরকে এ বন্ধি জীবন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, এ দায়িত্ব রাষ্ট্রের, নারীদেরকে মুক্ত করতে হবে।
কিন্তু আমি আমার ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে বলব যখন কোনো মুসলিম নারী অভিযোগ করছে না, আমরা বন্দি আছি বা আমাদের পর্দা করতে সমস্যা তাহলে সুশীল সমাজের এমন আচরণ কেন?
ইসলাম কোন বিজাতী ধর্ম অবলম্বী বা আলাদা ধর্ম অবলম্বী কোন মেয়েদের পর্দার বিষয়ে বলেনি। ইসলাম শুধু বলেছে মুসলিম ধর্মের নারীদের পর্দা বাধ্যতামূলক। সুতরাং যে মেয়ে বা নারীরা স্বেচ্ছায় পর্দা মানতে চায় তাদের বিষয়ে সুশীল সমাজ নারীবাদী সমাজ নারীদের বন্দিজীবন উল্লেখ করে মন্তব্য করা হীনমন্যতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
সুতরাং আমরা চেষ্টা করব কারো ধর্মে যেন আঘাত না হয়। তা শুধু হিজাব বা কপালের টিপ শাঁখা সিঁদুরের সীমাবদ্ধ নয়, যেকোনো ধর্মীয় অনুভূতি তে আমরা যেন কেউ কারো ধর্ম নিয়ে আঘাত মূলক মন্তব্য না করি।
কেননা আমরা যদি এই বিষয়ে সজাগ না হয়। আমাদের এই সমপ্রীতির বাংলাদেশ এক সময়ে সাম্প্রদায়িক সংঘাত বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
সাম্প্রদায়িক সংঘাত কোন জাতি বা গোষ্ঠীর জন্য মঙ্গলকর বয়ে আনবে না। আমাদেরকে বুঝতে হবে আমরা হিন্দু, আমাদেরকে বুঝতে হবে আমরা মুসলিম এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বীদের পারস্পরিক বন্ধনে আমাদের এই সোনার বাংলাদেশ।
অন্য কোনো তৃতীয় শক্তি বা আবির্ভূত নতুন শক্তির সাম্প্রদায়িক উস্কানি সংঘটিত করে স্বার্থ হাসিল করতে না পারে এ বিষয়ে আমাদের সাথে থাকতে হবে।
আমরা সবাই শুধুই বাঙালি এ কথা ভুলে গেলে চলবে না। আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক। এখানে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এবং আরেকটি পার্শ্ববর্তী দেশ পাকিস্তান, আমরা যদি মনে করি তারা আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে সচেষ্ট এটা নেহাতই বোকামি। আমাদের ভাগ্য আমাদেরকেই পরিবর্তন করতে হবে আমাদের সমস্যা আমাদেরকেই সমাধান করতে হবে।
আমি আশা করব আমার কথাগুলো আমি আমার বাঙালি ভাই ও বোনদের বুঝাতে পেরেছি।
No comments